ছবি: সংগৃহীত
আমরা প্রত্যেকেই চাই নিজে ভালো থাকতে। নিজের ভালো লাগা ও ভালো থাকার জন্যই সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করি। তবে শুধু সময় অর্থ ও শ্রম ব্যয় করেই নয়, অন্যের উপকার করেও ভালো থাকা সম্ভব। অন্যের উপকার ও স্বেচ্ছাসেবার মধ্য দিয়ে আসলে আমরা নিজেরই সেবা করি। কথাটির সাথে বিজ্ঞানও একমত। আসুন জেনে নিই বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।
কমে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি
কানাডার একদল হাইস্কুল শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াতে বলা হয়। চার মাস পর স্বেচ্ছাসেবীদের রক্তে পাওয়া যায় ‘ইন্টারলিউকিন ৬’ প্রোটিনের অস্তিত্ব, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোধে যা দারুণ কার্যকরী।
আরেকটি গবেষণা বলছে, স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত মানুষের মৃত্যুঝুঁকি ২৪% কম। উল্লেখ্য, প্রতিদিন ছয়টির বেশি ফল এবং সবজি খেলে একই অনুপাতে মৃত্যুঝুঁকি কমে। এ-ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধির হার কম থাকে। রক্তনালীতে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস পায় এবং অন্যদের তুলনায় তাদের হাসপাতালেও যেতে হয় কম।
উচ্চ রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কয়েকজন গবেষক একদল প্রবীণের ওপর একটি ব্যতিক্রমী গবেষণা পরিচালনা করেন। প্রবীণ দলকে দুভাগে ভাগ করে কিছু অর্থ দেয়া হয়। একদল তা খরচ করে নিজের জন্যে, আরেকটি দল অন্যের কল্যাণে। কয়েক সপ্তাহ পর দুই দলের রক্তচাপ মেপে দেখা যায়, যারা পরার্থে অর্থ ব্যয় করেছেন তাদের রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় কম।
আরো পড়ুন : শিশুর বেছে বেছে খাবার খাওয়ার অভ্যাস যেভাবে দূর করবেন
মানসিক সুস্থতা ও প্রফুল্লতা হয় নিরবচ্ছিন্ন
অন্যের জন্য ভালো কিছু করার উদ্যোগটি নিতে পারেন আপনার পরিবার থেকেই। পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক দুই পক্ষের মানসিক সুস্থতা, উৎফুল্লতা এবং ইতিবাচকতাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সাহায্য করে।
নেতিবাচকতার ক্ষতি সম্পর্কে আপনজনকে যখন আমরা সতর্ক করি, নিজের মস্তিষ্কেও সেটি অটোসাজেশনের মতো তথ্য সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন, মানসিক চাপ মোকাবেলায় অন্যদের সাহায্য করলে আমাদের নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা এবং মানসিক সুস্থতা বাড়ে।
একাকিত্ব ও জড়তা দূর হয়
স্বেচ্ছাসেবীদের একাকিত্ববোধ তুলনামূলক কম। কারণ এর মধ্য দিয়ে সে বাস্তব সামাজিক যোগাযোগে অভ্যস্ত হয়। বাড়ে মানুষের সাথে মিশতে পারার সক্ষমতা। যোগাযোগ স্থাপনের জড়তা দূর হয়।
শুকরিয়া ও প্রশান্তির সন্ধান মেলে
অন্যের দুঃখ লাঘব করতে গিয়ে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী নিজের জীবনে আগের চেয়ে বেশি শোকরগোজার হয়ে ওঠেন। অনুভব করেন প্রশান্তি। নিজের দুঃখটা তখন ছোট মনে হয়। কমে আসে অহেতুক অভিযোগপ্রবণতাও।
সঙ্গীর যত্নে বাড়ে নিজের আয়ু
তিন সহস্রাধিক প্রবীণ দম্পতির ওপর পরিচালিত একটি বড় পরিসরের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত ১৪ ঘণ্টা পরস্পরের সেবাযত্ন করেন তারা দীর্ঘায়ু হন।
দূর হয় অস্থিরতা, বিষণ্নতা : অ্যা রেভলিউশনারি অ্যাপ্রোচ টু সাকসেস বইয়ের লেখক ও মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্রান্টের মতে, দুশ্চিন্তারোধী ওষুধগুলোর মধ্যে একটি হলো অন্যের প্রতি সমমর্মিতা। একাধিক গবেষণা বলছে, যে দিনগুলোতে আমরা দান করি বা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করি বা অন্যের কল্যাণ চিন্তা করি, সেই দিনগুলোতে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কম থাকে।
এস/