শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ‘নিপীড়ন বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন ১৬০ জন বিশ্বনেতা ও নোবেলজয়ী।
সোমবার (২৮ আগস্ট) ‘প্রটেক্ট ইউনূস’ শিরোনামের ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ উঠে এসেছে।
চিঠিতে বলা হয়, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর ব্যাপক আক্রমণের অংশ হিসেব বাংলাদেশ সরকার গত ১৩ বছর ধরে মুহাম্মদ ইউনূসকে নিপীড়ন করে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে বলা হয়, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতা এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার জাতি কীভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে আমরা তার তারিফ করি।
আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকি দেখে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং নির্বাচনে নিয়োজিত প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাকে ‘মানবাধিকারের জন্য হুমকি বিবেচনা করে’ তারা উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন।
চিঠিতে বলা হয়, এর আগে ৪০ জন বিশ্ব নেতা আপনার কাছে যে আবেদন করেছিল, এ চিঠি তার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। আমরা সম্মানের সঙ্গে অনুরোধ করছি যে, অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন। তারপর আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করুন। এতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞরা ভূমিকা রাখবেন। আমরা নিশ্চিত যে, তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতিবিরোধী ও শ্রম আইনের মামলাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে তাকে খালাস দেয়া হবে।
চিঠিতে ড. ইউনূসকে ‘সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক’ উল্লেখ করে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণে সামাজিক ব্যবসার আন্তর্জাতিক অবদান তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সাম্প্রতিক দশকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তার অন্যতম প্রধান উদাহরণ তিনি। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি যে নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তিনি যুগান্তকারী কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়, আমরা আশা করি যে উপযুক্ত, নিরপেক্ষ ও ন্যায্য পদ্ধতিতে আপনি এ আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলিতে কীভাবে বিষয়গুলো সমাধান করা হবে বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের তারাও পর্যবেক্ষণ বলে জানান।
এর আগে গত মার্চে ৪০ জন বিশ্বনেতা এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। সেখানে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে দক্ষ এবং প্রশংসিত নাগরিকদের একজনের বিরুদ্ধে বিবেকহীন প্রচারণা’ বন্ধের আহ্বান করা হয়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমানে একাধিক মামলা চলছে। আগামী ৩১ আগস্ট পুনরায় বিচার শুরু হতে যাওয়ায় শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনের বেশি বিশ্ব নেতা নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
স্বাক্ষরদাতা নোবেলজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, অ্যালবার্ট আর্নল্ড গোর জুনিয়র, তাওয়াক্কোল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, অস্কার আরিয়াস সানচেজ, রসায়নে পিটার অ্যাগ্রে, টমাস আর চেচ, মার্টিন চালফি, অ্যারন সিচানোভার, জোয়াকিম ফ্রাঙ্ক, ওয়াল্টার গিলবার্ট, রিচার্ড হেন্ডারসন, অর্থনীতিতে অলিভার হার্ট, ফিন ই কিডল্যান্ড, পল আর মিলগ্রম, সাহিত্যে হার্টা মুলার, ওরহান পামুকসহ অন্যান্যরা।
এর আগে সারাবিশ্বের নাগরদিকের উদ্দেশ করে ‘কল টু অ্যাকশন’ প্রচারণা শুরু হয়। এর সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের ৩৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। ড. ইউনূসসের সমর্থনে তাদের একটি বিবৃতি আগামী ৩১ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইসের আন্তর্জাতিক সংস্করণে প্রকাশ হবে।
এসকে/
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেলজয়ী ১৬০ জন বিশ্বনেতা
খবরটি শেয়ার করুন