শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের ৪০ স্থানে জিপিএস স্টেশন বসানোর প্রস্তাব

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প সারা বিশ্বের জন্যই একটি আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। একই সঙ্গে চলছে নানা গবেষণা। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেই কোনো নিজস্ব প্রযুক্তি কিংবা বড় গবেষণাও। ফলে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্ভর করতে হয় অন্য দেশের ওপর। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্যই দেশের ৪০ স্থানে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস স্টেশন বসাতে চায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)।

ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ-এ তিন গতিশীল প্লেট বা পাতের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এর মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিলেট, যার উত্তরে ‘ডাউকি ফল্ট’। এ প্লেটগুলো সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় এখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। আর জমে থাকা এসব শক্তি যে কোনো সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। ফলে অতিমাত্রায় ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সব কটি এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ‘ডাউকি ফল্ট’ ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গত পাঁচশ থেকে এক হাজার বছরে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তি না হওয়ায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

বর্তমানে আর্থ অবসারভেটরি অব সিঙ্গাপুরের সাতটি জিপিএস স্টেশন আছে বাংলাদেশে। ভূমিকম্পের তথ্যের জন্য এই প্রতিষ্ঠানসহ অন্য দেশগুলোর দিকে চেয়ে থাকতে হয় বাংলাদেশকে। তবে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। সম্ভাব্য ভূমিকম্পের আগাম তথ্য দেওয়া, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকারকে সাহায্য করা এবং মজুত তেল-গ্যাসের স্থান চিহ্নিতকরণসহ এ সংক্রান্ত কাজ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর এর জন্য দেশের ৪০টি স্থানে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্টেশন বসানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে জিএসবি।

এ বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন জিএসবি’র পরিচালক ও হেড অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি আর্থ অবসারভেটরি অব সিঙ্গাপুর এবং জিএসবি’র মধ্যে ভূমিকম্প সম্পর্কিত একটি প্রকল্পেও কাজ করছেন।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবী কয়েকটি ভূত্বকীয় প্লেট বা পাতের ওপর অবস্থিত। আর এসব প্লেটের প্রতিটিই গতিশীল অবস্থায় আছে। ফলে যখন একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেটের সংঘর্ষ হয় তখনই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই। তবে আমরা চাইলে এর ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে পারি।

আরো পড়ুন: সৌরজগতের বাইরে গ্রহের সন্ধান দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, উন্নত দেশগুলো তাদের ভূত্বকীয় পাতের গতিবিধির ওপর দীর্ঘ গবেষণা করে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনে। বর্তমানে আমরা ভূত্বকীয় প্লেটের গতিবিধির তথ্যের জন্য আর্থ অবসারভেটরি অব সিঙ্গাপুরের সাতটি জিপিএস স্টেশনের ওপর নির্ভর করছি। যার ফলে চাইলেও আমরা নিজেরা গবেষণা করতে পারি না।

বাংলাদেশে জিপিএস স্টেশন স্থাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের মহাপরিচালক ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশনায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৪০টি জিপিএস স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যেটি সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে চূড়ান্ত অবস্থায় আছে। এটি স্থাপন করা গেলে এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের আগাম তথ্য দেওয়া, মজুত তেল-গ্যাসের স্থান চিহ্নিতকরণ, এই সঙ্গে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সরকারকে সাহায্য করা যাবে।

কীভাবে এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ভূত্বকীয় পাতগুলোর গতিশীলতা নির্ণয়ের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণামূলক তথ্যের প্রয়োজন। আর এটির একটি টাইম-সাইকেল থাকে সাধারণত ১০-১৫ কিংবা ১৫-২০ বছরের। যদি আমাদের জিপিএস স্টেশনগুলো থাকে তাহলে আমরা সহজেই এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে গবেষণা করতে পারব। আর সরকারকে একটি সমন্বিত তথ্য দিতে পারব।

এম এইচ ডি/

জিপিএস স্টেশন

খবরটি শেয়ার করুন