ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ঘুরতে গিয়ে হোটেলে স্বামীকে খুন করার দায়ে স্ত্রী ও তার কথিত প্রেমিকসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৮শে নভেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এই আদেশ দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. জালাল উদ্দীন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে নিহত আলে ইমরানের স্ত্রী ও একই গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে খুশনাহার, তার কথিত প্রেমিক গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ধরিবাজপুর গ্রামের সোলাইমান মন্ডলের ছেলে ও ঢাকার একটি কোম্পানির তৎকালীন জিএম মাহমুদুল হাসান মাহিন (২৪) ও মাহিনের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাত আলীর ছেলে নাদিম আহমেদ নাঈম (১৯)।
পরকীয়া প্রেমের জেরে খুশনাহার তার স্বামী ইমরানকে সহযোগীদের সহায়তায় ২০২৩ সালের ১৬ই এপ্রিল জাফলংয়ের রিভারভিউ হোটেলে খুন করে পালিয়ে যান তারা। তার লাশ হোটেলের পাশের ড্রেনে পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়। রহস্য উম্মোচনের পর তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তারা আলোচিত ওই ঘটনাকে সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেন।
জানা গেছে, আলে ইমরানের (৩২) সঙ্গে ৫ বছরের সংসার ছিল খুশনাহারের। দুই বছর পর মাহিদুল হাসান মাহিনের পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন খুশনাহার (২১)। এরপর স্বামী আলে ইমরানকে হত্যার উদ্দেশে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব থেকে ট্রেনে করে সিলেটে আসেন খুশনাহার। জাফলংয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ১৬ই এপ্রিল সকালে স্বামীকে নিয়ে জাফলং বল্লাঘাট পর্যটন কেন্দ্রের রিভারভিউ হোটেলে ওঠেন তিনি। অন্য গাড়িতে করে জাফলং আসেন প্রেমিকাসহ আরও তিন সহযোগী।
হোটলে অবস্থানকালে স্বামীকে মাথা ব্যথার ওষুধের পরিবর্তে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ান খুশনাহার। রাতে পাশের অন্য হোটেলে অবস্থান করা প্রেমিকসহ তিনজন চলে যান রিভারভিউ হোটেলে। তারা সবাই মিলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ইমরানকে হত্যা করে মরদেহ হোটেলের পেছনে ফেলে পাথর চাপা দেন। পরদিন পর্যটকদের তথ্যের ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলা হয় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। ১৯শে এপ্রিল রাতে নাঈমকে (১৯) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের গাজীরটেক গ্রামের নিজবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে খুশনাহার ও প্রেমিক মাহিনকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামিদের গ্রেফতার নিয়ে ২০শে এপ্রিল সিলেটে প্রেস ব্রিফিং করেন তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ব্রিফিংকালে তিনি কিভাবে স্বামীকে জাফলং নিয়ে গিয়ে তার স্ত্রী অন্যদের সহায়তায় খুন করেন তার বর্ণনা দেন। হত্যার দায়ও স্বীকার করেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মাথায় আদালত আলোচিত এ মামলার রায় প্রদান করেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জালাল উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরেক আসামি আব্দুর রকিব নাবালক হওয়ায় তার বিচারকার্য শিশু আদালতে হচ্ছে। রকিবও প্রেমিক নাহিনের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি ছিল। রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
ওআ/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন