রবিবার, ১৩ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার *** 'পয়লা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসের সংঘাত নেই' *** ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে বাংলাদেশের সবাই আছে *** খেলাধুলার জগতে এখন রোনালদো সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড *** সোনালি দিনের সুবাতাস ঢাকাই সিনেমায় *** ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাবে অধিকাংশ দেশ, ট্রাম্পের ইঙ্গিত *** লাখো মানুষের স্লোগানে মুখরিত ঢাকা *** বাটা, কেএফসি’তে ভাঙচুর-লুটপাটের নেপথ্যে কারা? *** ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে একজনকে আগুন দিতে দেখা গেছে: ঢাবি প্রক্টর *** সৌদি রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের ভিত্তিতে মডেল মেঘনা কারাগারে

বাটা, কেএফসি’তে ভাঙচুর-লুটপাটের নেপথ্যে কারা?

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৪ অপরাহ্ন, ১২ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান মানবতাবিরোধী গণহত্যার প্রতিবাদ বিশ্বজুড়ে হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে দেশীয় কয়েকটি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, গাজীপুর ও খুলনাসহ একযোগে দেশের অনেক এলাকায় হামলা-লুটপাটের এসব ঘটনা ঘটে। একটি গোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে একই কায়দায় বিভিন্ন স্থানে লুটপাট করে। প্রশ্ন ওঠেছে, কারা, কী উদ্দেশ্য এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন? তাদের আসল উদ্দেশ্য কী? 

দেশে যখন বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগ সম্মেলন চলছিল, ঠিক তখন বিদেশি মালিকানার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায় ও লুটপাট করে। এর পেছনে তাদের কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? দুর্বৃত্তরা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে লুটপাটের মতো বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না, বা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। 

গত ৭ই এপ্রিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দেশজুড়ে মানববন্ধন-জনসভার আয়োজন করে গাজায় চলমান মানবতাবিরোধী গণহত্যার প্রতিবাদে। তাদের সঙ্গে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসব কর্মসূচির মিছিল-সমাবেশ থেকে একশ্রেণির নেতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের উস্কানি দেন।

বলা হয়, বাটা-কেএফসিসহ কোমল পানীয় ইসরায়েলি পণ্য, এগুলো বাংলাদেশে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ সুযোগই  লুটপাটকারীরা গ্রহণ করেন। অথচ উস্কানিদাতারা হয়তো জানেনও না, এসব পণ্যের কোনোটাই ইসরায়েলি নয়।

ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় প্রতিটি বিবেকবান মানুষ ক্ষুব্ধ। বাটা সুদীর্ঘকাল ধরে এ দেশের সাধারণ থেকে উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তেমনই কেএফসি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষদের কাছে নির্ভরযোগ্য মানসম্মত খাদ্যপণ্য। বিশ্বব্যাপী যার সুনাম রয়েছে।

শুধু যে কেএফসি, বা বাটাতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে, তা নয়। আরো অনেক রেস্টুরেন্ট, খাদ্যপণ্যের দোকান ও ফার্মেসিসহ নানা পণ্যের দোকানে হামলা চালানো এবং লুটপাট করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাদের বাধা কোনো কাজে আসেনি। শেষে সেনা সদস্যরা মাঠে নামায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

‘ভাইরাল’ (আলোচিত) একটি  ভিডিওতে দেখা গেছে, সিলেটের একটি বাটা জুতার শো-রুমে লুট করতে ভেতরে অনেক যুবক ছিলেন। এমন সময় সেনা সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে লুটপাটকারীরা পালিয়ে যান। সেনাসদস্যরা অনেককে গ্রেপ্তার করেন। কয়েক লুটপাটকারী আবার লুটের ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। চুরি কাণ্ডের ‘উল্লাসের’ দৃশ্য শেয়ার করেন তারা!

এসব ঘটনা কোনোভাবেই ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়। যারা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, তারা সুস্পষ্টভাবে অপরাধী, সুযোগসন্ধানী ও লুটেরা। তারা দুর্বৃত্ত, অপরাধী। এ ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মধ্য দিয়ে গাজাবাসীর প্রতি ‘সহানুভূতি’ জানানোর বদলে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে গেছে। 

এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট বরং বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে। যারা এসব অপকর্ম করেছেন, তারা শুধু ধর্মকে অবমাননা করেননি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করলেন।

গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা নানা উছিলায় সুযোগ পেলেই বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, হামলা এবং ভাঙচুর করেন। এতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পুলিশ বলেছে, বাটা-কেএফসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বেশকিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের দাবি, ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রত্যেক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।

টার্গেট করে বিদেশি পণ্য বর্জন ও লুটপাটের ঘটনায় বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ভয়ংকর বার্তা পৌঁছে গেছে। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। বাটা, কেএফসি বা পিৎজহাটে সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা শুধু উদ্বেগজনক নয়, দেশের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর।

এইচ.এস/




লুটপাট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন