শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংগীত, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, ২৮শে নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছর থেকে সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলো সংগীত, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলার শিক্ষক পাবে। এ লক্ষ্যে প্রায় ২০ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে আবারও বৃত্তি। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের বদলে দুই বছর হবে। সচল করা হচ্ছে শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোয় ২ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে। চলতি বছর থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে সব শ্রেণিতে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর এ পরীক্ষার মূল্যায়ন আগের মতো গ্রেড পদ্ধতি থাকছে না। 

এখন থেকে মূল্যায়ন হবে চার স্তরে, যার নতুন নামও দেওয়া হয়েছে। ৩৯ নম্বর পর্যন্ত ‘সহায়তা প্রয়োজন’ স্তর; ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত ‘সন্তোষজনক’; ৬০ থেকে ৭৯ পর্যন্ত ‘উত্তম’ এবং ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত ‘অতি উত্তম’ স্তর বলে বিবেচিত হবে। আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, আগামী ২রা ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিকের সব শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিদ্যালয়গুলোয় নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। 

বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ ভাগ হলেও এই শিশুরা কতটা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করছে—সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চাইতেও বেশি।

বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষকের বছরের পর বছর কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ হয় না। প্রশিক্ষিত শিক্ষকের এই হার এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে কম। ইউনেস্কোর গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিকে বড় পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, বিদ্যালয়গুলোয় সহকারী শিক্ষকের প্রায় ২০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পরে তারা প্রধান শিক্ষকও হতে পারবেন। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার ৫ হাজার ১৬৬টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কিছু পদ তৈরি করা হবে। এ শিক্ষকদের যাতে নিয়োগ দেওয়া যায় তার জন্য নিয়োগ বিধিমালায় এসব পদ যুক্ত করা দরকার। সেই প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। তবে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হবে না। এটা অঞ্চলভিত্তিক পদায়ন করা হবে। যেমন একটি অঞ্চলের কয়েকটি বিদ্যালয় মিলে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজারের ওপরে। এত বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে প্রথমে ক্লাস্টারভিত্তিক করা হবে, পরে পদ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষকের পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটাও প্রথমে ক্লাস্টারভিত্তিক করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশের স্কুলেই এ পদ সৃষ্টি করা হবে। প্রাথমিকভাবে চারুকলার শিক্ষকের পদও ৫ হাজারের অধিক হবে।

আরও পড়ুন: সাত কলেজের পরীক্ষা আবারও স্থগিত

শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে অবহেলিত বা পথশিশুদের জন্য কিছু স্কুল পরিচালনা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ট্রাস্টই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সম্প্রতি এ ট্রাস্টকে সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকের আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯৫০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংক দেবে অনুদান হিসেবে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পাশ হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরেকটি উদ্যোগ নিচ্ছে, সেটি হলো—ঢাকা মেট্রোপলিটন অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৫৬টি। এর মধ্যে বেশির ভাগই পুরোনো স্কুল। এসব স্কুলের ভবনকে নতুন করে, দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা। ইতিমধ্যেই ২০৪টি স্কুলের কাজের প্ল্যান হয়ে গেছে। টেন্ডার হয়ে গেছে ১০৩টির। কাজ শুরু হয়েছে ৬৭টির। আর আগামী মাসের মধ্যেই আধুনিক আঙ্গিকের ১০টি বিদ্যালয় উদ্বোধন করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনতে চায়। একদিকে যেমন নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টিম করা হয়েছে। তাদের পরামর্শ নিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করব। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে তাদের মিড-ডে মিলে ভালো খাবার যুক্ত করব। বিদ্যালয়ের ভবনগুলোও আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করব। এছাড়া শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, বদলি পদ্ধতি সহজ করাসহ আরও অনেক নতুন সিদ্ধান্ত আমরা নিতে যাচ্ছি। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমরা দৃশ্যমান অনেক কিছু করব।’

এসি/ আই.কে.জে/       

সংগীত

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন