শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূর্যমুখী ফুল ফুটিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:০০ অপরাহ্ন, ১৫ই জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রাম। আমন আবাদ শেষে ধান কাটার পর জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে। দীর্ঘ সময় পর পাট চাষ করা হয়। মধ্যবর্তী সময়ে জমিগুলো পতিত না রেখে কী কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে চাষিরা ছিলেন চিন্তিত। এবার কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুশ্চিন্তা কেটে গেছে তাদের। পতিত জমিগুলোতে সূর্যমুখী ফুল ফুটিয়ে নতুন স্বপ্নের সূচনা করেছেন। এতে লাভের আশা করছেন তারা।

এখন বিস্তীর্ণ গ্রামের মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর হাসি চোখে পড়ার মতো। চৈত্রের শুরুতে যেন বসন্তের হাওয়া বইছে। সকাল বেলা পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের সঙ্গে ঘুরতে থাকে ফুলগুলো। সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ রকম চিত্র দেখে মন জুড়িয়ে যায়। জমিতে একেকটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। এই সৌন্দর্য দেখতে আশপাশের এলাকা থেকেও ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই।

এছাড়া সরিষা এবং সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল মানসম্পন্ন। বাজারে যেমন রয়েছে চাহিদা, তেমনই রয়েছে দাম। ফুল থেকে উৎপাদিত বীজও ভালো দামে বাজারে বিক্রি হয়। গ্রামটিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক চাষ আর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মাইজপাড়া গ্রামের দুই একর জমিতে সেলিম সরকারসহ চার কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন। মহিনন্দ ইউনিয়নে এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এর চাষ হয়েছে। রোপা আমন কাটার পর প্রায় ৫০-৬০ হেক্টর জমি পতিত অবস্থায় থাকে। সেখানে কিছুই আবাদ করতেন না চাষিরা। আমনের পর জমিগুলোতে পাট চাষ করতেন। এবার মধ্যবর্তী সময়ে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। দেশি ঘানি ব্যবহার করলে পরিপক্ব সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ভাঙানো যায়। এই তেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম। তাই সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।

এবারই প্রথম জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি জানিয়ে মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক সেলিম সরকার বলেন, ‘সরকারিভাবে বীজ-সার বিনামূল্যে পেয়েছি। ফুল এসেছে। দেখতে সুন্দর লাগছে। বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ হলো। আশা করছি, খরচ বাদে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হবে। আগামীতে আরো তিনটা ক্ষেতে চাষের চিন্তা করছি। আমাকে দেখে গ্রামের অনেকে এখন সূর্যমুখী চাষের কথা ভাবছেন।’

এদিকে, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরসহ আশপাশের লোকজন ফুলের সৌন্দর্য দেখতে জমিতে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে ক্ষেতে ঢুকে ছবি ও সেলফি তুলছেন। সেসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করছেন।

চারদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য দেখতে জেলা শহর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অপূর্ব এক অনুভূতি। গত কয়েকদিন আগে এই পথ ধরে যাচ্ছিলাম, তখনই সূর্যমুখী ক্ষেতটি চোখে পড়ে। ওই সময় ভেবেছিলাম, এখানে পরিবার নিয়ে একবার ঘুরতে আসবো। ফসলের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের এমন বাগান দিন দিন বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য ভালো। তবে যারা দেখতে আসছেন, সবাইকে ফুল ছেঁড়া বা চাষির যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আরো পড়ুনব্রয়লার মুরগির মৃত্যুহার কমাবে আমলকি পাউডার

এসি/ আই.কে.জে/

কৃষক সূর্যমুখী ফুল

খবরটি শেয়ার করুন