সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজস্ব কূটনীতির কারণেই বিপদের মুখে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০১ অপরাহ্ন, ৭ই মে ২০২৩

#

ফ্রান্সে চীনের রাষ্ট্রদূত, লু শায়ে : ছবি- সংগৃহীত

চীনের বিভিন্ন নীতি এখন দেশটিরই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের দ্বন্দ্ববাদী কূটনীতি এখন তার পররাষ্ট্র নীতির জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। ফ্রান্সে চীনের রাষ্ট্রদূত, লু শায়ে একটি টিভি সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের মতো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

তিনি বলেন, প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক আইনে কোনও ধরনের কার্যকর মর্যাদা নেই। কারণ সার্বভৌম দেশ হিসেবে তাদের স্বীকৃতি প্রদানে কোনও ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি। এ মন্তব্য বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

সাক্ষাৎকারের সময়, তিনি ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ বলে স্বীকার করতেও অস্বীকৃতি জানান। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এ মন্তব্য ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যগুলোকে ইউরোপীয় পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন। 

গত বছর, লিথুনিয়া তাইওয়ানের একটি অফিসকে নিজের দেশে অনুমোদন প্রদান করে এবং অফিসটিকে তাইওয়ানের নামেই পরিচালিত হওয়ার অনুমতিও দেয়। ফলে ক্ষুব্ধ চীন অবিলম্বে লিথুনিয়ার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ডিসেম্বরে শেষমেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে এবং জানায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) চীনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ইইউ কমিশন জানায় যে, ভিলনিয়াস তাইওয়ানের কূটনৈতিক প্রথা ভঙ্গ করার পর চীন এই বছর বাল্টিক দেশগুলো থেকে বাণিজ্য প্রায় ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

ইইউ এর মাধ্যমে চীনের বাণিজ্য উন্নতির পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। পূর্বে কোভিডের কারণে ইইউ এর সাথে চীনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না এবং বর্তমানে লু এর মন্তব্যের ফলে এ সম্পর্ক আরো তিক্ত হতে চলেছে।

তবে চীনের অবস্থান লু-এর একদম বিপরীত। গত তিন দশক ধরে চীন কখনোই সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে নি। বরং তাদের সাথে ভালো সম্পর্কই বজায় রেখেছে চীন।

এ ব্যাপারে গত সোমবার, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পরেও সার্বভৌম দেশ হিসেবে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে চীন।

প্যারিসে চীনা দূতাবাস লু এর মন্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে অভিহিত করে দায় এড়াতে চায়।

তবে এমন মন্তব্য লু প্রথমবার করেন নি। এর আগেও তিনি অনেক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে গেছেন। গত বছর তিনি তাইওয়ানকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। ২০১৯ সালে যখন তিনি কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে ছিলেন, তখন তিনি কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোলাম বলে অভিহিত করেন। 

তার এই আক্রমণাত্মক স্বভাব অবশ্য তার কর্মজীবনকে রঙিন করেছে এবং তাকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের পদমর্যাদাও প্রদান করেছে। কিন্তু লু এর সাম্প্রতিক বিবৃতি চীনকে বিপদের মুখেই ফেলেছে। এই বিব্রতকর অবস্থার জন্য অবশ্য শি জিনপিং সরাসরি দায়ী, তিনি লু কে সর্বাত্মক উৎসাহ প্রদান করে গিয়েছিলেন।

২০২২ সালের আগস্টে, মার্কিন প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে এলে চীন তার এই সফরের তীব্র বিরোধিতা করে এবং স্বাধীন দ্বীপ তাইওয়ানের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করে।

এ ব্যাপারে লু আবার নতুন করে নিজের ইচ্ছামত ইতিহাস তৈরি করতে শুরু করেন এবং বলেন, ২৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাইওয়ান চীনের অধীনে ছিল। তখন ইউরোপে রোমান সাম্রাজ্যের শাসন চলছিলো এবং ফ্রান্সের উত্থান তখনও হয় নি।

গত বছর, যখন উইঘুর বিষয়ে সারাবিশ্বের দৃষ্টি চীনের উপর ছিলো, তখন তিনি আবার বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন এবং বলেন উইঘুর নাগরিকেরা শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে রয়েছে।

কোভিড মহামারীর সময় যখন সারাবিশ্ব চীনকে দায়ী করছিলো তখন চীনের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে লু এবং তার মতো আরো অনেকে।

তবে বর্তমানে চীন এখন যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হতে চাচ্ছে, তখন লু এর বেফাঁস মন্তব্যের কারণে তাকে বারবার আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হচ্ছে।

এ/এম

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন