ছবি : সংগৃহীত
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছিল। টেকনিক্যালসহ বেশকিছু ক্যাডার সার্ভিসে থাকা ক্যাডারদের মধ্যে এ নিয়ে একটা চাপা ক্ষোভ ও অভিমান রয়েছে।বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল, সঙ্গত কারণেই সকল বৈষম্যে থাকা মানুষগুলো জেগে উঠেছে।উপসচিব নিয়োগের সময় বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নিয়োগ পান। তাহলে কেন প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশ পদ সংরক্ষণ থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অন্য ক্যাডাররা। যা খুবই যুক্তিসঙ্গত। এ নিয়মের কারণে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে ২৫টি ক্যাডার থেকে মাত্র ২৫ শতাংশ নিয়োগ পান। ফলে দেখা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে সাধারণত অন্যান্য ক্যাডারের ৪-৫ ব্যাচ সিনিয়র সদস্যরা একত্রে উপসচিব পদে নিয়োগ পান। একই সাথে চাকরিতে যোগদান করলেও তারা অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে থেকে যান। তাতে দেখা যায়, প্রায় বিভাগভিক্তিক মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে প্রশাসন ক্যাডাররাই সুযোগ পান। উচ্চতর পদে প্রশাসন ক্যাডারে ৭৫ শতাংশ সংরক্ষিত থাকায় সবাই প্রথম কিংবা দ্বিতীয় গ্রেডে অবসর নেন। অন্যদিকে অন্যান্য ক্যাডাররা এক্ষেত্রে গ্রেড তৃতীয় কিংবা চতুর্থ-গ্রেডে গিয়ে অবসর নেন।
পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত যতজন মুখ্যসচিব, কেবিনেট সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হয়েছে- সব পদই প্রশাসন ক্যাডার থেকে পূরণ হয়েছে।তাছাড়া সচিব, সিনিয়র সচিবও দু-একজন ছাড়া প্রশাসন ক্যাডার থেকে এসেছেন। এসব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ- তারা সুপারনিউমারারি পদোন্নতির সুযোগ না পেলেও প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারির সুযোগে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। অথচ সরকারি কর্মকর্তা সবারই পদোন্নতি পাওয়ার সমান অধিকার থাকার কথা।
বর্তমান সিস্টেমে বাংলাদেশের প্রশাসন ক্যাডারকে এমন কিছু পাওয়ার প্র্যাকটিস, প্রমোশন, আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা অন্য ক্যাডারদের থেকে যোজন-বিয়োজন তফাৎ। সে জন্যই বর্তমান সময়ে বিসিএসের ফলাফলে দেখা যায়, অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি কিংবা অন্য টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করে প্রশাসন অথবা পুলিশ ক্যাডারে আসছেন। আবার দেখা যায়, প্রথমবার কেউ টেকনিক্যাল ক্যাডার পেয়েছেন, পরবর্তীকালে প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডারের জন্য আবার চেষ্টা করছেন-এমন সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেই বিষয়ে না থেকে প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডার কেন পছন্দের শীর্ষে? এর পেছনে ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধার বৈষম্যই দায়ী।
আরো পড়ুন : শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
একজন বুয়েট কিংবা মেডিকেলের শিক্ষার্থীর কাছে জাতি কি আশা করে? একজন মেডিকেলের শিক্ষার্থী বিসিএস দিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে গিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবেন। কিংবা একজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অবকাঠামো খাতে কাজ করবেন, এমনি কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করে কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষির উন্নয়ন করবেন। এটাই তো কাম্য। কিন্তু তাহলে তারা কেন টেকনিক্যাল ক্যাডার না নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন।
বিগত কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।এজন্য টেকনিক্যাল ক্যাডারগুলোর পদ প্রতিবছর খালি থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিশেষায়িত বিষয়গুলো থেকে সাধারণ ক্যাডারে আসার প্রবণতা বাড়ছে। এতে প্রতিবছর ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশার দক্ষ মানবসম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা না গেলে এমন প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে চাকরিতে দীর্ঘদিন ধরে কোটা পদ্ধতি ছিল। সে সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম নম্বর নিয়েও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। এখন চাকরির নিয়োগে আর কোটা বৈষম্য নেই। এখন দাবি উঠেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। দাবি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের বৈষম্য নেই। কোথাও থাকলেও কমিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশেও বৈষম্য দূর করতে আন্তঃক্যাডার সমস্যা নিরসনে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন