ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
বাংলার যে দু’জন লোক-দার্শনিকের নাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করেছেন তাদের একজন লালন সাঁই (১৭৭৪-১৮৯০) এবং অন্যজন হাসন রাজা (১৮৫৪-১৯২২)। উভয়ের সাধনার মাধ্যম ছিল গান।
হাসন রাজা এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শীর্ষস্থানীয় সাধক ও মরমি কবি। তার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৫৪) তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত জমিদারের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলী রাজা চৌধুরী। তবে হাসন রাজার পূর্বপুরুষগণ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে গবেষকদের ধারণা।
স্বশিক্ষিত একজন সাধক কবি ছিলেন দেওয়ান হাসন রাজা। অজস্র গান তিনি রচনা করেন আঞ্চলিক ভাষায় যাতে ছিল অত্যন্ত সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল সুর। তার গানের সুর তিনি নিজেই করতেন এবং বিভিন্ন আসরে পরিবেশন করতেন। এছাড়া তার রচিত ও সুর করা গান স্থানীয় বাউল-ফকিরেরাও গেয়ে বেড়াতেন। তার গানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাত্ত আহ্বান রয়েছে। তিনি তার গানের মধ্যে ‘বাউলা’, ‘আউলা’, ‘বাউল’, ‘ঠাকুর’, ‘দেওয়ান’, ‘উদাসী’, ‘পাগলা’ প্রভৃতি নামে বা উপাধিতে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। হাসন রাজাকে নিয়ে বিশেষ করে তার কর্ম ও গান নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা হয়নি। তবে কোনও একবার ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অধিবেশনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসন রাজা সম্পর্কে সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘পূর্ববঙ্গের একজন গ্রাম্যকবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই সেটি এই যে, ব্যক্তি স্বরূপের সহিত সম্বন্ধসূত্রই বিশ্ব সত্য। হাসন রাজাকে অনেক বড় মাপের সাধক হিসেবে গণ্য করতেন কবিগুরু তা এ থেকে স্পষ্টতই ধারণা মেলে।
আরো পড়ুন : একটি বাউল গান ও এর ভাবার্থ
হাসন রাজা তার রচিত গানের বাণীতে দর্শন ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। আর এ সকল বাণী সংকলন করা হয়েছে ‘হাসন বাহার’, ‘সৌখিন বাহার’, ‘হাসন উদাস’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থে। তিনি আমৃত্যু গান রচনা করে গেছেন। ১৯২২ সালের ৭ই ডিসেম্বর তিনি পরপারে পাড়ি জমান।
দেওয়ান হাসন রাজাকে বিভিন্ন গুণীজন নানা আখ্যায় ভূষিত করেছেন:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- গ্রাম্যকবি আখ্যা দেন
ফোকলোরবিদ মুহম্মদ মনসুরউদ্দিন- লোককবি আখ্যা দেন
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ- মরমি কবি আখ্যা দেন
সৈয়দ মুর্তাজা আলী- স্বভাবকবি আখ্যা দেন
রণজিৎকুমার সেন- কবি হিসেবে আখ্যা দেন
প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত- গানের রাজা আখ্যা দেন
প্রভাতকুমার শর্মা- খাটিঁ মরমি কবি আখ্যা দেন
ড. আবুল আহসান চৌধুরী- দার্শনিক হৃদয় মরমি সাধক
কবি আচার্য ক্ষিতিমোহন শাস্ত্রী- বাউল আখ্যা দেন।
সূত্র
১. আবুল আহসান চৌধুরী (সম্পা.), শ্রীবস্তকুমার পাল, মহাত্মা ফকির লালন, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা, ২০১১
২. তপন বাগচী, লোকসংস্কৃতির কতিপয় পাঠ, গতিধারা, ঢাকা, ২০০৮
৩. তপন বাগচী, লোকগানের খোজেঁ, আলোকায়ন, ঢাকা, ২০১৬
৪. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী, লোকসংগীত, প্যাপিরাস, ঢাকা, ১৯৯৯
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন